ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। এ নির্বাচনে ব্রিটেনের প্রধান তিনটি দল থেকে লড়ছেন ১২ বাংলাদেশি। তারমধ্যে রয়েছেন ১০ জন ‘সিলেটি’। নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে ৮ জন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) থেকে ৩ জন এবং কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন বাংলাদেশি লড়ছেন। ব্রিটেনের নির্বাচনে এবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি প্রার্থী যেমন মনোনয়ন পেয়েছেন, তেমনি সর্বোচ্চ সিলেটিও এবার লড়ছেন নির্বাচনে। ফলে এবারের নির্বাচন নিয়ে গোটা বাংলাদেশতো বটেই তবে সিলেটের মানুষের আগ্রহটা একটু বেশি।
এ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে ব্রিটেনে বাংলাদেশি তথা সিলেটিদের ক্ষমতায়নের একটি বিরাট সুযোগ তৈরি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এবারের নির্বাচনে একক কোনো দলের আধিপত্য থাকবে না বলেই মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তবে মূল লড়াইটা লেবার পার্টি এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই হতে পারে।
জানা যায়, এবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সিলেটি প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। এরা হচ্ছেন লেবার পার্টির রোশনারা আলী, ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, আমরান হোসাইন, ড. রূপা আশা হক, আলী আখলাকুল, ফয়ছল চৌধুরী, সুমন হক, লিবারেল ডেমোক্রেটস (লিবডেম) পার্টির আশুক আহমদ, প্রিন্স সাদিক আহমদ, মোহাম্মদ সুলতান ও কনজারভেটিভ পার্টির মিনা রহমান। তবে নির্বাচনের কিছুদিন আগে সিলেটের ছাতকের সুমন হকের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। লেবার পার্টি মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল করে দেয়। ফলে এখন নির্বাচনে লড়ছেন ১০ জন সিলেটি।
গত রোববার ছিল নির্বাচনের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দেশটির নির্বাচনী ভাষায় দিনটিকে বলা হয় ‘কি সিট ডে’। এদিন মার্জিনাল (তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ) আসনগুলোতে শেষবারের মতো ব্যাপক প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। তারমধ্যে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে সিলেটের জগন্নাথপুরের ড. রূপা আশা হক প্রচারণা চালান। এছাড়া বিশ্বনাথের রোশনারা আলীও রোববার ওই দুই আসনে প্রচারণা চালিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি তার পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনেও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এই আসন থেকেই ২০১০ সালের নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটেনে এমপি হয়েছিলেন রোশনারা।
এবারের নির্বাচনে সিলেটি ১০ জন প্রার্থীর বাইরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা হচ্ছেন লেবার পার্টির প্রার্থী শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং লিবডেম’র প্রার্থী নারায়ণগঞ্জের মেরিনা আহমদ।
এবার বাংলাদেশি প্রার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগ্রহ বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে নির্বাচনের আমেজ রয়েছে পুরোমাত্রায়। এদিকে নির্বাচনী জরিপে এবার এগিয়ে কিছুটা রয়েছে লেবার পার্টি। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে এবার কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। দুইয়ের বেশি দলের সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে পারে এবার। কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির মধ্যেই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে নির্বাচনে প্রভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে ইউকে ইনডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) ও গ্রিন পার্টির মতো ছোট দলগুলো।
গত সপ্তাহে স্কাই নিউজ প্রকাশিত জরিপের ফলাফল বলছে, এবার কনজারভেটিভ পার্টির ৩৫ শতাংশ, লেবার পার্টির ৩৫ শতাংশ, লিবডেমের ৭ শতাংশ, ইউকেআইপির ১১ শতাংশ এবং অন্য দলগুলোর ১২ শতাংশ ভোটার কিংবা সমর্থন রয়েছে।
ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ডেইলি সানের পাঠক জরিপ অনুযায়ী লেবার পার্টির চাইতে কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র এক শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছে। ব্রিটেনের আরেক শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ডেইলি মেইলের জরিপ বলছে, এখনো কোনো দলকে ভোট দেবেন, এমন সিদ্ধান্তহীন ৪০ শতাংশ ভোটারই ঠিক করে দিতে পারে চূড়ান্ত সরকার গঠনের বিষয়টি।
0 comments: